'মোদের পায়ের তলায় মুর্সে তুফান': GKCIET-এর আন্দোলন চলছে

৭২ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যখন সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর করা নিয়ে আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই মালদার গণিখান চৌধুরী কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (GKCIET)-র ছাত্র- ছাত্রীদের লড়াই এই " স্বাধীনতা"-কে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আন্দোলন শুধুমাত্র বৈধ সার্টিফিকেট আদায়ের লড়াই নয়, এই লড়াই সার্বিকভাবে শিক্ষার নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এক আন্দোলন। এক আন্দোলনকারীর বয়ানে "আপনারা যে যেখানে প্রতারিত হয়েছেন তারা আমাদের আন্দোলনের পাশে আসুন, আমাদের অধিকার আমরা লড়ে নেব"। শেষ কিছুদিন ধরে তাঁরা (GKCIET-এর ছাত্র-ছাত্রীরা) পুলিশের রক্তচক্ষু, ঝড় জলকে উপেক্ষা করে "অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস"- এর সামনে অবস্থান করছেন এবং তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন "হয় আমাদের বৈধ রেজাল্ট নিয়ে ফিরব, নয়তো আমাদের লাশ ফিরবে"। এই দাঁতে দাঁত চিপে লড়াইয়ের এক সহযোদ্ধা শাহিন-এর সাথে কথোপকথন নিচে দেওয়া হল: 



আপনাদের আন্দোলন কবে থেকে চলছে?
আন্দোলন প্রধানত দু' বছর ধরে চলছে। তবে শেষ আমরা ২০১৮-এর জুলাই মাসের ২৩ তারিখ থেকে আবার আন্দোলন শুরু করি।

আপনাদের কতজন ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে এসেছে?
৭০ জন ছাত্রছাত্রী অবস্থানে বসেছি তবে প্রতারিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮০০ এর বেশি।

কোন দাবীতে আপনারা প্রধানত আন্দোলন করছেন?
প্রধানত এই আন্দোলন বৈধ সার্টিফিকেট এবং বি.টেক- এ দ্বিতীয় বর্ষে ল্যাটারাল ভর্তির দাবীতে। 

আপনাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ অথোরিটির এই বিষয়ে কি বক্তব্য?
আমাদের আন্দোলন প্রধানত বৈধ সার্টিফিকেটের দাবীতে শেষ দুই বছর ধরে চলছে। কিন্ত কলেজ অথোরিটি বৈধ সার্টিফিকেট দিতে পারছেনা। ২০১৬ সালে আন্দোলনের ফলে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল আমাদের ডিগ্রি এবং ভোকেশানাল ডিগ্রি-এর বৈধতা দেয়। কিন্তু মডিউলার সিস্টেম অনুযায়ী দু' বছরের ভোকেশনাল ডিগ্রি আই.টি.আই-এর সমতুল্য এবং দু' বছরের ডিপ্লোমা ডিগ্রি হওয়ার কথা কিন্তু কলেজ অথোরিটি সরকারকে জানায়নি ২ বছরের আই.টি.আই ডিগ্রিটি কি তার উল্লেখ ছিলনা সার্টিফিকেটে,যার জন্যে আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। ২০১৮ সালের মে মাসের ৮ তারিখ তাই আমরা আন্দোলন শুরু করি এবং মে মাসের ১৬ তারিখ এই আন্দোলন আমরণ অনশনের রূপ নেয়। এরপর জুনের ১লা তারিখ মালদার জেলা শাসক, কলেজের ডিরেক্টর এবং ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয় এবং মালদার এ.ডি.এম  আমাদের লিখিত দেয় যে আগামি ১০ দিনের মধ্যে আমাদের বৈধ রেজাল্ট দেওয়া হবে এবং নিয়ম মেনে আমাদের বি.টেক-এর দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। এর পরেও কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় আমরা ২৩ তারিখ থেকে আবার অবস্থান শুরু করি এবং বর্তমানে মালদার জেলা শাসক আমাদের কোন ভাবে সাহায্য করছেন না।

আপনাদের কলেজে এই সার্টিফিকেট দিয়ে কি বি.টেক দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি নিচ্ছে?
না, আমাদের কলেজও আমাদের ভর্তি নিচ্ছেনা । আমাদের প্রতিনিধি টিম ইউনিভার্সিটি (MAKAUT)-এ যায় এবং ইউনিভার্সিটি রেজিস্টার আমাদের বলেন যে ইউনিভার্সিটি কোন ভাবেই আমাদের ভর্তি নিতে পারবেনা কারণ আমাদের ডিপ্লোমা দুই বছরের এবং দুই বছরের ডিপ্লোমা কোথাও বৈধ নয়। দু বছরের সার্টিফিকেট ডিগ্রিটি কী তার উল্লেখ ছিলোনা  তাই তার পরের দু বছরের ডিপ্লোমা বৈধতা পাচ্ছেনা ফলে আমরা ভর্তি হতে পারছিনা। 

আপনারা যে আন্দোলন করছেন সেই জন্যে কোন মঞ্চ বা সংগঠন গঠন করেছেন আপনারা? 
সংগঠন গঠন না করলেও আমরা "GKCIET-এর সাধারণ ছাত্রছাত্রী ঐক্য মঞ্চ" নামে এই আন্দোলন চালাচ্ছি।

আপনারা যে আন্দোলন করছেন এর পাশে আর কাদের পেয়েছেন?
আমরা কিছুদিন আগে একটি পথসভা করি, সেখানে কোলকাতা থেকে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি, প্রসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বর্ধমান ইউনিভার্সিটি ও মালদা মেডিকেল কলেজ-এর ছাত্রছাত্রীরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বর্তমানেও আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে তাঁরা আছেন। এছাড়াও বারুইপুর পলিটেকনিক-এর ছাত্রছাত্রীরা আমাদের আন্দোলনের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। এছাড়াও বিশিষ্ট  বিদ্দজনেরা আমাদের আন্দোলনের পাশে এসেছেন।

আপনারা কি আন্দোলনের জন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাহায্য নিয়েছেন?
না, আমরা যেহুতু এই আন্দোলন সমস্ত রকম রঙ-দলকে বাদ দিয়ে করছি তাই কোন রাজনৈতিক সংগঠন আমাদের আন্দোলনে নেই। তবে বেশ কিছু রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি জারি করেছে।

বর্তমানে আপনারা যে কলকাতায় আন্দোলনকে নিয়ে এসেছেন তার কারণ কি?
আমাদের কলেজ প্রধানত MHRD-এর অধিনস্ত তাই সুদূর মালদা থেকে আমাদের আন্দোলন চালানো এবং অথোরিটির কাছে দাবী জানানো সম্ভব হচ্ছিলনা তাই আমরা কলকাতায় আন্দোলনকে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হই,তবে বর্তমানে কিছু আন্দোলনকারী মালদায় অবস্থান করছে। এছাড়াও আমাদের কিছু আন্দোলনকারী ভিক্ষা করে প্রতীকী আন্দোলন করেছে যে অথোরিটি আজ আমাদের রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

আপনারা এখনও অবধি কলকাতায় কি কি কর্মসূচী নিয়েছেন?
আমরা প্রথমে কলেজ স্ট্রীটের সামনে পথসভা করি, তারপর যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড এর সামনে পথ করি এরপর আমরা রানু ছায়া মঞ্ছে সভা করি এবং অবস্থান শুরু করি। এছাড়া সমস্ত কোলকাতায়  আমাদের প্রচার অভিযান চলছে।

আপনারা যে এখানে অবস্থান করছেন তার জন্যে কোন রকম প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে?
পুলিশের চোখ রাঙানোর সাথে সাথে কলেজ অথোরিটি বিপুল গুন্ডা বাহিনী এবং প্রায় ২০ টি বাইক, ছাত্র ছাত্রীদের শাসাচ্ছে। এছাড়াও আমরা এখানে যে অবস্থান করছি তার জন্য প্রয়োজনে ত্রিপল টাঙানোর পারমিশন দেয়নি।

আপনারা তো আপনাদের দাবী দাওয়া জানাতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গেছিলেন, সেখান থেকে সাহায্য পাওয়া গেছে?
সাহায্য তো দূরে থাক, কোন রকম কথাই তাঁরা প্রাথমিক ভাবে শুনতে চাইছিল না। নবান্নে গিয়ে আমাদের তরফ থেকে প্রতিনিধি টিম আমাদের দাবী দাওয়া সংক্রান্ত চিঠি জমা দিতে গেলে তা প্রথমে জমা নিতে চায়নি, পরে জমা না নেওয়ার কারণ আমাদের লিখিত দেওয়ার জন্যে আমরা জোড় করলে শেষে জমা নিতে বাধ্য হয়। 

আপনারা কতদিন পর্যন্ত আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
যতদিন না বৈধ সার্টিফিকেট পাচ্ছি ততদিন আন্দোলন চলবে। হয় বৈধ সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরব নয়তো আমাদের লাশ ফিরবে।

আপনারা কোলকাতা সহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীকে কোন বার্তা দিতে চান?
হ্যাঁ, আমরা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীকে এটাই বলতে চাই যে আপনারা যে যে সময়ে প্রতারিত হয়েছেন সে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান, এই লড়াই প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই। পাশে থাকুন আমাদের, আমাদের অধিকার আমরা লড়েই নেব। 

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শঙ্খ শুভ্র বিশ্বাস। শঙ্খ 'পিপ্‌ল্‌স্‌ ব্রিগেড' সংগঠনের সদস্য। 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার