ভোটে বেলঘরিয়াঃ ২০১৯ দমদম লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন

সায়ন নন্দী
সকালবেলা ইভিএম মেশিনের সামনে গিয়ে বেলঘরিয়ার মানুষ যদি একটু হতভম্ব হয়ে পড়েন, সেটা যে খুব একটা বিস্ময়কর বা অবাক করা ঘটনা তা কিন্তু নয়। এই ধরুন আপনি সকালে চায়ে চুমুক দিয়ে অল্প লাইনকে ডজ্ করে ইভিএম-এর সামনে গিয়ে উপস্থিত  হতেই ধীরে ধীরে আপনার হাসি মুখটা পানসে হয়ে গেলো। চক্ষুটা চড়কগাছ হয়ে কপালের ঘামটা আসতে আসতে সিড়ি দিয়ে নেমে আসতে শুরু করলো, আপনার গালে। 


হ্যাঁ, একেবারেই ভুল শুনছেন না। এবার দমদম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী সংখ্যা ১২। চাইলে ইস্ট মোহনের মতো আপনিও রিজার্ভ টিমে ১জন-কে রেখে একটি ফুটবল টিম নামাতেই পারেন নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নিয়ে। উদ্দেশ্য? ওই যে... রাজনৈতিক হিংসা বন্ধের মতো এক অলৌকিক ভাবনাকে সামনে রেখে।  

এই বেলঘরিয়া থেকে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছে সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্য থেকে তৃণমূলের সৌগত রায় অথবা বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য থেকে কংগ্রেস-এর সৌরভ সাহা। তাছাড়াও লাইনে বিএসপি-র নরেশ চন্দ্র বাড়ুই, আরজেপি-র অমিত সেনগুপ্ত, শিবসেনা থেকে ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী, পিডিএস-এর ঝুমা ঘোষ, এসইউসিআই-এর তরুণ কুমার দাস, রেডস্টারের শংকর দাস, আরজেএসপি-র সত্যব্রত বন্দোপাধ্যায় এবং এনডিপি-র সুবীর দাস।


হ্যাঁ, লাইনটা একটু নয়, বিশালই বড়ো। আর এই বড়ো লাইন দেখে আপনার কপালের ঘামটি গালে নেমে আসাটাই স্বাভাবিক। 

এই বেলঘরিয়া গেছে এক বিশাল বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে, বেশ কিছু সময়ের অন্তরে অন্তরে। এক সময় বেলঘরিয়ার বাটা চত্বর সংলগ্ন অঞ্চল ছিল ডানপন্থী এবং বাদামতলা নিমতা চত্বর সংলগ্ন অঞ্চল ছিল বামপন্থীদের দখলে। কংগ্রেস নিজেদের দলীয় কোন্দল মেটাতে না পেরে একই রাস্তায় দুটো, কোথাও কোথাও তিনটে দূর্গা পুজো কমিটি প্রতিষ্ঠা করে বসে! অন্যদিকে, ধীরে ধীরে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বামপন্থীরা বেলঘরিয়ায় তাদের সংগঠন বিস্তার করে। 

বামেদের প্রায় সবকটি পার্টির প্রতিনিধিরা থাকে এখানে। এলাকার দেওয়াল লিখন বা পোস্টারের বৈচিত্র থেকে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নীতি দুর্নীতি সবেরই সাক্ষী এই এলাকা। অমিতাভ নন্দীর এক ভাগ্নে না ভাইপো কে যেন আডামাস-এর কর্ণধার! আবার বর্তমান বিধায়ক মানসবাবু একদা খেলোয়াড়দের নিয়ে সংগঠন করলেও এখন বিশেষ কোথাও তাকে দেখা যায় না। 

এখানে বিধায়ক থাকাকালীন অবস্থাতেই এলাকার মুখ পুড়িয়ে মদন সারদা কান্ডে জেলে গেছিল। সিটিং এমপি সৌগত বাবু তো আবার নারদের হূলে বিদ্ধ।  দমদম থেকে তপন শিকদার একবার বের হলেও বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিতে কখনও পা দেয়নি বেলঘরিয়া। ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেসের সাথে মধুচন্দ্রিমায় উদ্যত পিডিএস এবং তৃণমূলের সাথে ঘর করে আসা শিবদাসের দলও রয়েছে প্রার্থী তালিকায়! আছে মরাল পলিসিং-এর ঠাকুরদা শিবসেনা। এবং ভাঙ্গর আন্দোলন করে আসা রেড স্টার পার্টির প্রার্থীও রয়েছে।  

হ্যাঁ, আজ বেলঘরিয়াতে আবার একবার ভোট। বেলঘরিয়া চিরকাল প্রতিবাদ করে এসেছে। বেলঘরিয়ার বিধান হোক রাস্তায় নামা আন্দোলনকারীদের পক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে, প্রগতিশীলতার পক্ষে, শোষণ ও বঞ্চনার বিপক্ষে, দূর্নীতির বিপক্ষে, অর্থনৈতিক জুমলাবাজীর বিপক্ষে এবং সকল প্রকার সংশোধনবাদ থুরি সুবিধাবাদের বিপক্ষে।   

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার