শাসক ও শাসিতের রাজনীতিঃ পরিপ্রেক্ষিত চলমান ডি এ আন্দোলন
বহ্নিহোত্রী হাজরা
প্রথম প্রকাশ: অপ্রচলিত, সংখ্যা ৩, বর্ষ ১, এপ্রিল-জুন ২০২৩
(অপ্রচলিত পত্রিকার অনুমতি নিয়ে পুনঃপ্রকাশিত)
বিগত ৬ মে কোলকাতার হাজরা ক্রসিং কার্যত সরকারি কর্মচারীদের দখলে। চারদিকে শুধু কালো মাথা- এলাকায় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। বহুদিন পর সরকারি কর্মচারীদের এভাবে পথে নামতে দেখল বাংলার মানুষ। আন্দোলন পেরোলো ১০০ দিন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। কেন্দ্রের বেতন স্কেলের সঙ্গে সমতা রেখে ডিএ বাড়ানোর দাবিতে সরকারি কর্মচারীরা মাস তিনেকের ওপর আন্দোলন করছেন। রাজ্যের প্রায় সমগ্র 'বাম' মহলও এই আন্দোলনের শরিক। সংগ্রামী যুক্ত মঞ্চ জানিয়েছে তাঁদের দুটি দাবি- ১) হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী সর্বভারতীয় হারে সমস্ত বকেয়া ডিএ প্রদান করতে হবে। ২) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে সমস্ত শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে। পরে তাঁরা যোগ্য অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণের দাবিটিও জুড়েছেন। বহুদিন পরে নিরাপদ সুখী গৃহকোণটি ছেড়ে পথে নেমে পড়া দেখে ভালই লাগছে। বিগত কোনও আন্দোলনে এই শ্রেণির সামগ্রিক ভাবে এ ভাবে ময়দানে নেমে পড়া দেখেছি মনে পড়ে না। তাঁদের ডিএর দাবি ন্যায্য হকের দাবি কোনও সন্দেহ নেই। মুশকিল হল সরকারি কর্মচারী বলতে মনের মধ্যে যে একটা ছবি গেঁথে গেছে। আচ্ছা নচিকেতার গানটা- “ঘুষ আমার ধর্ম ঘুষ আমার কর্ম ঘুষ নিতে কি সংশয়?/ প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনই নয়।”- কি শুধুই গাঁজাখুরি গপ্পো কথা নাকি সুদূর অতীত? আপনার মনে পড়ে সরকারি অফিসে এক পয়সাও ঘুষ না দিয়ে বিনা হয়রানিতে শেষ কবে কোনও কাজ করিয়েছেন? নাহ এই নিয়ে এখন কথা বাড়াবো না, ঘৃণার পাহাড় জমে আছে মানুষের মধ্যে। প্রায় ২০০ বছর ধরে গড়ে ওঠা ভদ্রলোক বাবুদের এই জোতদারি আর জুলুমবাজির বাস্তব ছবিটা নিয়ে বলতে বসলে কথায় কথা বাড়বে। বরং আসুন, তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দ্রুত সার্বিক ছবিটা দেখে নিই।
কয়েকটি প্রশ্ন একটু যাচিয়ে নেব। প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সাথে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বেতন, পেনশন সহ অন্যান্য সমস্ত ধরনের সুযোগ-সুবিধা কতটা ভিন্ন; দ্বিতীয়ত দেশের বাকি সিংহভাগ জনগণের আয়ের সাপেক্ষে সরকারি কর্মচারীদের বেতন আর সুযোগ সুবিধা তুলনা করলে সার্বিক ছবিটা কী দাঁড়ায় ইত্যাদি। তবে অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা আমাদের উদ্দ্যেশ্য কখনই নয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আলোচনাটা রাখতে চাইছি সমগ্রের নিরিখে।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ১০ লক্ষ; অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১%। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া ডিএ ৩% বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে আরও ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এ বছরই ১ মার্চ রাজ্য সরকার ডিএ আগের ৩% থেকে দ্বিগুণ করে ৬% করার কথা ঘোষণা করে। তবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের স্কীমের সাথে সমতা রেখে ডিএ বাড়ানোর দাবি করছেন। বলাই বাহুল্য রাজ্যের দেওয়া ডিএ-র হার কেন্দ্রের তুলনায় বেশ কম। অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্যের তুলনাতেও যথেষ্ট কম। রাজ্য সরকারের ভাষ্য হল, এখানে ডিএ কম হতে পারে কিন্তু এটি দেশের অন্যতম ব্যাতিক্রমী রাজ্য যেখানে এখনও পুরোনো পেনশন স্কিম (ওপিএস) অনুযায়ী পেনশন দেওয়া হয়; যাতে রাজকোষের ওপর ব্যপক চাপ পড়ে। হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলা ছাড়া বাকি সব রাজ্য কবেই বাজপেয়ী সরকারের আনা নতুন স্কীমে চলে গেছে। দুটি স্কীমের কী পার্থক্য? যেখানে পুরোনো পেনশন স্কিম গ্যারান্টি দেয় রাজ্য সরকারি কর্মীর শেষ বেতনের ৫০%-এর সমান পেনশন দেবে, সেখানে নতুন স্কীম হল বিনিয়োগের বাজারের রিটার্নের সাথে যুক্ত একটি অবদানমূলক স্কিম। তাহলে এই নতুন স্কীমটি ঠিক কী রকম? পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নামে একটি সংস্থার কথা শুনেছেন? এই সংস্থা এই গোটা পেনশন ফান্ডকে ম্যানেজ করে অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের স্কীম এবং বন্ডে এই টাকা খাটায় এবং শেয়ার বাজারের ওপর নির্ভর করে খাটানো টাকার ওপর লাভ উঠে আসে। আচ্ছা, তাহলে যে টাকা খাটানো হবে সেই টাকাটা আসবে কোথা থেকে? এই ফান্ড তৈরি করতে সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ১০% কেটে নেওয়া হয় (ওপিএসে কর্মচারীর বেতন থেকে কিন্তু এক পয়সাও কাটা হয় না), এবং সরকার প্রতি মাসে বেতনের ১৪% অবদান রাখে। বিনিয়োগকৃত পরিমাণ ৯% থেকে ১২% চক্রবৃদ্ধি সুদে সঞ্চিত হবে। যখন একজন কর্মী অবসর গ্রহণ করবেন তখন গোটা অঙ্ক নিয়ে একটি পেনশন তহবিল গড়ে উঠবে, যা সরকারি বিল, বন্ড, কর্পোরেট শেয়ার ইত্যাদি মিলিয়ে একটি জগাখিচুড়ি সংমিশ্রণে বিনিয়োগ করা হবে। মোদ্দা কথা নতুন স্কীমে আপনার পেনশন বাজারের ওঠানামার ওপর নির্ভর করবে যেখানে পুরনো পেনশন স্কীমে তা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে রাজকোষের ওপর চাপ বেশী। ধরুন, রাজস্থানের কথা। সেখানে পুরোনো পদ্ধতিতে পেনশন দিতে রাজস্বের ২৮% ব্যয় হয়, যেখানে মহারাষ্ট্র, গুজরাট ইত্যাদি রাজ্যগুলি তাদের রাজস্বের মাত্র ১৪% ব্যবহার করে নতুন পেনশন স্কিমে পেনশন দিতে। কেন্দ্রীয় সরকার তার মাত্র ১১% রাজস্ব ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের পেনশন দিতে। সাম্প্রতিক কালে এই নিয়ে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলিতে ব্যাপক আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মচারীরা পুরোনো পেনশন স্কিমে ফিরে যাওয়ার দাবিতে। প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্র তাদের কর্মীদের ওপিএস-এর দাবিতে যেকোনও আন্দোলনের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা রাজ্য সরকারের বাজেটে ওপিএস-এর ফলে যে বিপুল ব্যয় হচ্ছে তার দিকে ইঙ্গিত করে আশঙ্কিত হয়ে বলছেন যে এটি অব্যবহারযোগ্য এবং রাজ্যগুলির উচ্চ ঋণের প্রধান কারণ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সাথে সমতা বিবেচনা করার সময় এই সমস্ত দিকগুলি বিবেচনা করা দরকার, বিচ্ছিন্নভাবে ডিএ সমস্যাকে দেখাটা সম্ভব নয়।
এবার একটু ডিএ-র ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রথম এই ডিএ প্রথা চালু হয় বোম্বে সুতাকলের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের জেরে। প্রথমে ১৯৪৭-এ এর নাম ছিল ‘Old textile Allowance’, যা পরে ১৯৫৩ তে নাম পাল্টে হয় ‘Revised Textile Allowance’। তাহলে শ্রমিকদের লড়াইয়ের এই ফসল তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে কি?
পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের বাস্তব চিত্র যদি দেখি, সহজেই বুঝতে পারবো চটকল, চা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ইত্যাদি বড় বড় শিল্পক্ষেত্র থেকে শুরু করে গারমেন্টস, ব্যাগ, বেকারি ইত্যাদি ছোটো ছোটো ক্ষেত্র- সর্বত্রই ধারাবাহিক ছাঁটাই-লক আউট-ঠিকা প্রথা-জোর করে ভিআরএস দেওয়া এই সবের মধ্যে দড়িয়ে ডিএ-র মতো অধিকারগুলো আজ শ্রমিকেরা ভুলতে বসেছেন। সমস্ত ক্ষেত্রে চুক্তিকরণ চলছে ব্যাপক হারে। আমরা দেখতে পাই যে ২০০১-০২ সালে ভারতের সমস্ত কারখানায় ৫.৯৬ মিলিয়ন শ্রমিক নিযুক্ত ছিলেন, যা ২০১৭-১৮ সালে ১০৫ শতাংশ বেড়ে ১২.২২ মিলিয়ন হয়েছে। একই সময়ে চুক্তি কর্মীদের সংখ্যা ২০০১-০২ সালে ১.৩ মিলিয়ন থেকে ২০১৭-১৮ সালে ৪.৪৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ২৪৩ শতাংশ বেড়েছে। নতুন শতাব্দীর শুরুর দশকের গোড়ার দিক থেকে বড় ভারতীয় সংস্থাগুলি চুক্তি কর্মীদের উপরই মূলত নির্ভর করেছে। মোট শ্রমিকের শতাংশ হিসাবে, চুক্তি কর্মী /ঠিকা শ্রমিক ২০০১-০২ সালে ২১.৮ শতাংশ থেকে ২০১৭-১৮ সালে ৩৬.৪ শতাংশে বেড়েছে। ২০১৮ সাল নাগাদ ঠিকা শ্রমিকদের গড় দৈনিক বেতন ছিল ৩০৫ টাকা। তাঁরা শুধুমাত্র সেই দিনগুলির জন্য বেতন পান যেদিন তাঁরা কাজ করেন এবং তাঁদের কোনও ছুটি বা অন্যান্য সুবিধা যেমন বাড়ি ভাড়া, অসুস্থ হলে ছুটি, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ডিএ ইত্যাদির কোনও বালাই নেই। তাই, ধরে নিই যে মাসে ২৬ দিন কাজ করে তাঁরা মোটামুটি ৮০০০ টাকা আয় করবেন। যা একটি গোটা পরিবারের সারা মাসের খরচ চালানোর জন্য খুবই কম। পরিকাঠামোর অভাবে ক্রমাগত ধুঁকতে থাকা সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্র এবং ফুলে ফেঁপে ওঠা বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবসার জমানায় দাঁড়িয়ে গুরুতর অসুস্থ হলে না আছে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার উপায় (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সাথী কার্যত অকার্যকরী), না আছে পকেটে পয়সা- ফলে মৃত্যুর জন্য দিন গোনা ছাড়া তাদের আর গতি কী? সহজেই বোঝা যায় লকডাউনের বলি কারা হয়েছিল! পিউ রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষণ অনুসারে দেখা গেছে যে ভারতে (প্রতিদিন ১০.০১-২০ ডলার আয় সহ) লকডাউনের ফলস্বরূপ ৩৩ মিলিয়ন মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে আরও নিচে নেমেছে তার জীবনযাপনের মানের নিরিখে।৪ মহামারির সময়কালীন মন্দার কারণে ভারতে দরিদ্র লোকের সংখ্যা (প্রতিদিন ২ ডলার বা তার কম আয় যাদের) অনুমান করা হয়েছে ৭৫ মিলিয়ন বেড়েছে।
আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৯০% অসংগঠিত সেক্টরে কাজ করে এবং প্রায় ৪০% বস্তিতে বাস করে। ভারতীয় শহরগুলিতে প্রায় ১ কোটি হকার রয়েছেন (মতান্তরে ৪ কোটি), যা শহুরে কর্মশক্তির প্রায় ১৫%। নানা ধরনের আগ্রাসন আর উচ্ছেদ, পুলিশ-প্রশাসনের চোখ রাঙানির মুখে দাঁড়িয়ে এই হকাররা এখনও টিকে রয়েছেন, জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন কোনওরকমে। আমরা যদি পারস্পরিক নির্ভরতার ক্ষেত্রগুলোকে মালার মতো গাঁথি, তাহলে দেখব জীবিকার উৎস হিসেবে হকাররা কৃষির পরেই দ্বিতীয়। আর একটি পেশায় ভিড় বাড়ছে ক্রমাগত- তা হল চৌকিদার। বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা প্রায় ৮.৯ মিলিয়ন চৌকিদার নিযুক্ত রয়েছেন এবং ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ তাঁদের সংখ্যা ১২ মিলিয়ন (১.২ কোটি) হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মজার বিষয় হল চৌকিদার হিসাবে নিযুক্ত লোকের সংখ্যা পুলিশ কর্মীদেরও পাঁচগুণ (২০১৬ সালে ১.৯ মিলিয়ন)। তাঁদের কোনো রকম সুযোগ সুবিধা ছাড়াই চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে বেতন দেওয়া হয়। সংগঠিত সেক্টরে চৌকিদার নিয়োগের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি প্রতি মাসে ৭০০০-৯০০০ টাকা দেয়; এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিশাল সংখ্যার চৌকিদারদের প্রতি মাসে মাত্র ৪০০০ টাকা করে দেওয়া হয়।
ই-শ্রম পোর্টালে নিবন্ধিত ২৮ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের মধ্যে, ৯৪% (বা প্রায় ২৬ কোটি কর্মী) প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকার কম আয়ের কথা জানিয়েছেন। এমনকি যদি ধরে নেওয়া হয় যে প্রতি পরিবারে দুজন লোক কাজ করছেন, তবে পরিবারের আয় ২০,০০০ টাকার কম হবে। প্রায় ৭৮ কোটি মানুষ কৃষি এবং ইট-ভাটা, কোয়ারি ইত্যাদির মতো ক্ষুদ্র শিল্প, বা ১০০ দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল। সার্বিক অর্থনৈতিক এককটিতে এদের অংশীদারিত্বের পরিমাণ খুবই কম যা হিসেবের খাতায় জিডিপির মাত্র ১৬%; অথচ এই জিডিপি-র সামান্য অংশের উপর সংখ্যাগত ভাবে দেশের মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। এর থেকেই বেশ বুঝতে পারি এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্নগামী। তাই দিন আনা দিন খাওয়া পরিস্থিতি এদের। আর জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সেই সব মানুষজনেরা যারা শহরগুলিতে বা ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্বৃত্ত শ্রমিক হিসেবে, তাঁদের কথা ভাববে কে? মনে পড়ছে রেললাইনের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রুটির টুকরোগুলো? লকডাউন তাঁদের চরম দুরবস্থা চোখের সামনে আনল! একটা দেশের সরকার তার নাগরিকদের নিয়ে এতটা দায়দায়িত্বহীন আর অসম্মানজনক আচরণ করে কীকরে? এ সত্যিই বিস্ময়কর!
তাই আমরা যদি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতনের (যা প্রতি মাসে ২৫০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকার মধ্যে থাকে) সাথেও এই বৃহৎ অসংগঠিত ক্ষেত্রের অর্থাৎ সমাজের বাকি অংশের তুলনা করি দেখব এক বিশাল ব্যবধান। আচ্ছা ২০০৬ সাল থেকে কার্যত চালু হয়েছে ১০০ দিনের কাজ। ১৭ বছর পেরিয়ে ২০২৩-এ কতটুকু বেড়েছে ১০০ দিনের দৈনিক মজুরি। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তার সাথে এই বৃদ্ধি কি আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ? প্রশ্নও উঠছে না তেমন একটা। যাঁরা এমনিতেই দারিদ্র সীমার নিচে ন্যূনতম দৈনিক আয়ের সমস্ত বিধিবদ্ধ সীমারও কম রোজগার করে তাঁদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে কেউ ভাবছে না কেন?
সমস্যাটা এটা নয় যে সরকারি কর্মচারীরা বাকি জনগণের সমস্যার কারণ। বা তাঁদের একার দায় বাকিরা কেন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না সেটা দেখবার। যদিও সেই দায় কি একেবারেই নেই? আবার ঘুষ থেকে শুরু করে সামাজিক ও সরকারি দুর্নীতির যে চক্র এই রাজ্যে এই দেশের প্রতি স্তরে স্তরে সক্রিয় তাতে কেবল রাজনৈতিক দলের নেতারাই আছেন কি? না। দুর্নীতিযুক্ত ব্যবস্থাকে শীলমোহর দিতে দিতে বিশেষ এই শ্রেণি হয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর জনবিরোধী এবং এই দেশকে অতি ধনী এবং বড় কর্পোরেটদের (ভারতীয় এবং বিদেশি উভয়ই) পক্ষে চালানোর কারিগর; কর্পোরেট লুঠের প্রক্রিয়া চালানোর অংশীদার অনেকক্ষেত্রেই, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে খোকলা করে দিচ্ছে। যে কোনও সরকারি কর্মচারী শাসন কর্তা থেকে স্কুল টিচার, নিরীক্ষক থেকে ক্লার্ক, কে উপরি রোজগার করেন না বলুন তো? পুলিশের কথা তো ছেড়েই দিন! এমন একটা দপ্তর বলতে পারবেন যেখানে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হয় না। ধরা যাক, রাস্তা মেরামতের কাজ অথবা কোনও সরকারি আবাসনের বিদ্যুৎ-এর তারের কোনও মেরামতির কাজের জন্য যে কন্ট্রাক্টরকে সরকারি দপ্তর থেকে টেন্ডার দেওয়া হল, সেই কন্ট্রাক্টরকে নিয়মিত ভিত্তিতে দপ্তরে এসিস্ট্যান্ট, সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে ঘুষ নিয়ে হবে।বছরের পর বছর ধরে মুখ বুজে এই দুর্নীতিকেই নিয়ম বলে মানতে বাধ্য করা হয়েছে জনগণকে। এদিকে সরকারি বাবুদের সমাজে স্পেশাল স্ট্যাটাস রয়েছে। রয়েছে সামাজিক কর্তৃত্বের সুযোগ। সে সুযোগের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার যে হয় না এমন তো নয়। বরং যেকোনো শাসক শ্রেণিকে ভরসা তারাই জোগান। কোনও সরকার তার এমন নিরাপদ স্তম্ভকে সাধারণভাবে চটান না। এঁদের হাতে রেখে এঁদের ঘাড়ে চড়েই ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক পাওনা গণ্ডার ইমারতে চড়া হয়। তৃণমূল সরকার চটিয়ে ফেলছে। আর এই চটানোটা খুব স্বাভাবিক নয়। এতে ক্ষতিটা শাসকেরই। শাসক তাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য নানা কুযুক্তি ব্যবহার করছে।
হিসাব নিকাশ আর টেকনিকাল কাজ ছাড়াও রাষ্ট্র তার আমলাতন্ত্রকে আর কেরানিদের পোষে জনগণের ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ আর দমন করার জন্য। সেই কাজে সরকারি চাকুরিজীবীরা শ্রেণিগত ভাবে রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দিয়ে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। শাসকের স্বার্থে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান তার চাকরির শর্তের অন্যতম উপাদান। ব্যতিক্রম অনেকেই আছেন, কিন্তু ব্যতিক্রমটা নিয়ম নয়। তো এ হেন একটা শ্রেণির স্বার্থে জনগণের করের কত শতাংশ টাকা বরাদ্দ থাকা উচিত? আর কত শতাংশ বরাদ্দ আছে? প্রশ্নটা তৃণমূল সরকার তোলেনি। কোনোদিন তুলবেও না। কারণ এই শ্রেণি তাদেরও শাসনের ভিত্তি।
সরকারি কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের সময় কিংবা ঘুষ নেওয়ার সময় অথবা জনবিরোধী সরকারি নির্দেশ পালন করার সময় কি মনে রাখেন তাঁরা জনগণের করের টাকায় প্রতিপালিত? জনগণের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা বাবু ও এলেবেলে ছোটলোকের নয়? তাই সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন কোনোভাবেই জনগণের স্বার্থের আন্দোলন নয়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে দর কষাকষিতে তাঁদের যুক্তি নির্ভুল। কিন্তু বৃহত্তর জনতার মানদণ্ডে বিচার করলে পরজীবী এই শ্রেণির মাইনে বাড়া কমায় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের পেটের খবর কোথায়?
কেরানি এই সেকশন সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলা বোধহয় জরুরি। সমগ্রের ধারণা থেকে অনেক দূরে থাকা, অর্থাৎ ব্যপক সাধারণ জনগণের থেকে ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতা; সাধারণ মানুষের বাস্তব পরিস্থিতি এবং দাবিদাওয়া-চাহিদাকে ছুঁতে চেষ্টা না করা ইত্যাদি সমস্যা তো রয়েইছে। উপরন্তু আন্দোলনের ময়দান থেকেও এমন কিছু ভাষ্য উঠে এসেছে তা খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি একধরনের তাচ্ছিল্যকে ব্যক্ত করে। আমাদের বাংলায় কৃষির পরেই সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সেক্ষেত্রে এমন কথা বলা যেখানে অন্য পেশাকে ছোটো করা হয়, আমরা মেধাবী, “আমরা কেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘুঘনি বিক্রি করব” বা “শিক্ষকদের কাজ কি মিড ডে মিল দেওয়া?”-ইত্যাদি ভাষ্য শুধু বেকারিত্বের ক্ষোভকে ফুটিয়ে তোলে না, সঙ্গে অন্য কাজকে ছোটো করে, ‘মেরিটোক্র্যাসির’ ধারণাকে প্রচার করে এবং সমাজের অন্য অংশের মানুষের প্রতি তাচ্ছিল্য ব্যক্ত করে; দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যাপক সংখ্যক শিশুদের পুষ্টির অধিকারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সামাজিক সুরক্ষার স্কীমকে (তা সে যতই জনপ্রিয় রাজনীতির অঙ্গ হোক না কেন) গুরুত্বহীন ভাবে দেখে। এর সামাজিক শিকড় খোঁজা জরুরি।
ছোটো করার এই মানসিকতার উৎস নানা ধরনের হায়ারারকি অর্থাৎ স্তর বিন্যাসের ধারণা। এর একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বাংলার বুকে চাকুরীজীবী এই সম্প্রদায় পাকাপোক্ত ভাবে গড়ে ওঠে ব্রিটিশরা এখানে গেঁড়ে বসার পর। ১৮-১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসন পরিচালনার জন্য বড় সংখ্যক কেরানির প্রয়োজন ছিল। সেই সময় মূলত বর্ণহিন্দুরাই এগিয়ে আসে ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে। ব্রিটিশরা বাংলার মুসলমান সমাজকে বিশ্বাস করেনি। তাদেরও ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণা এবং সন্দেহের ভাগই বেশি ছিল। দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরেই শিক্ষার আঙিনা থেকে অপাংতেয়। ফলে তারা সেযুগেও এই কেরানি সম্প্রদায় এবং পরবর্তীতে আমলাতন্ত্রে বিশেষ জায়গা পায়নি তা বলাই বাহুল্য। মূলত বর্ণ হিন্দুদের নিয়ে গড়ে ওঠে এই কেরানি নির্ভর শাসন ব্যবস্থা যার ধারাবাহিকতা ৪৭-এর পরেও থেকেছে। এই সম্প্রদায় অর্থাৎ ‘বাবু’-দের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যের ধারণা এবং ঔপনিবেশিক ভিক্টোরিয়ান মরালিটি এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে রয়েছে যা আজ আলাদা করাও কঠিন। আজকের নব্য উদারনৈতিক যুগে এই আধিপত্যের ধারণা ‘মেধা’-র জয়গানের মধ্যে দিয়ে সামনে আসে যাকে ‘মেরিটোক্র্যাসি’ নামে অভিহিত করা যায়। “সমাজে তারা সম্পদ কুক্ষিগত রাখবে, ‘ভালো’ থাকবে, নিরাপদে থাকবে কারণ তাদের মেধা রয়েছে। বাকিদের মেধা নেই তাই তারা হকারি করবে, ঠিকা শ্রমিক হিসেবে প্রায় বেগার শ্রম দেবে এবং যুগ যুগ ধরে তারই দেশের তারই মাটির সমস্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে”- এটাই তাদের যুক্তি যা ন্যায্যতা যোগায় অন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্যবস্থাকে। তাদের এই ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের ধারণার নগ্ন চেহারা দেখা যায় বিগত ৩ বছরে “কোভিড” সংক্রান্ত ভয়ের চর্চা, লকডাউন-মাস্ক-ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে নীতি পুলিশ গিরির মধ্যে দিয়ে। লকডাউনের পক্ষে সরকারি কোভিড ভাষ্যকে যখন মিডিয়া গলা ফাটিয়ে প্রচার করছে ঠিক সেই সময়ি নিরাপদে ঘরে বসে মাইনে নেওয়া সরকারি কর্মচারীও তার পাড়ায় সবজিওয়ালা মুদির দোকানদারের ওপর গলাবাজি করে বলেছে, “তোমরাই করোনা ছড়াচ্ছ- লকডাউনকে মানতে হবে, কোভিড বিধি ভাঙলে পুলিশ মারবে না তো কি করবে।”
এ সব কিছুর পরেও বলি, শিক্ষকদের আজও সম্মান রয়েছে সমাজে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন। গত তিন বছরে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-ছুট হয়েছে। অল্প বয়সে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিচ্ছে পরিবার- বহু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তীব্র আর্থিক অনটনে স্কুল ছেড়ে ঠিকা কাজে ঢুকছে। শোনা যাচ্ছে রাজ্যে ৮০০০ স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে। স্কুল শিক্ষাব্যবস্থার এই ধ্বসে পড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আপনাদের অর্থাৎ শিক্ষকদের ভূমিকা কি? এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না? সম কাজে সম বেতনের দাবী যখন করছেন; আপনার সঙ্গে একই মাধ্যমিক ইস্কুলে কাজ করছে যে প্যারা-টিচার বা পার্শ্ব শিক্ষক তার মাইনে ১৩-১৪ হাজার, যেখানে আপনার মাইনে ৪৫-৪৭ হাজার- এই অসাম্য নিয়ে কেন প্রশ্ন করবেন না? সমগ্র সমাজের সার্বিক ছবিটা জানার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত মধ্যবিত্তর দিন দিন বিচ্ছিন্নতা কি বাড়তেই থাকবে? সমাজের অগ্রণী বা সচেতন অংশ বাকি আপামর ৯০% থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরাপদ সুরক্ষিত জীবনের সন্ধান করবেন নাকি ৯০% মানুষের পাওয়া-না পাওয়া, দাবী দাওয়া, অবহেলা, নিপীড়নের অতীত-বর্তমান সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে বিচ্ছিন্নতা কাটাতে এগিয়ে আসবেন?
আন্দোলনটির রাশ আজ ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে চলে যাচ্ছে কেন? এটা কি হওয়ারই ছিল? অনেকেই যুক্তি দেবেন কে ক্ষীর খাবে তার জন্য ন্যায্য দাবীর অর্থনীতিবাদী আন্দোলন কি থেমে থাকবে? না, আন্দোলন হবে এবং তা অবশ্যই হওয়া উচিৎ কিন্তু আন্দোলনের মধ্যে একদম গোড়া থেকে থাকা যে সচেতন প্রগতিশীল বামপন্থী অংশ (অন্তত এই আন্দোলনে থাকা এক বড় অংশ নিজেদের বামপন্থি বলেই দাবী করেন) কি ভূমিকা নেবেন? তাঁরা কি সমগ্রের নিরিখে বিচার করে আন্দোলনের দাবী এবং ভাষ্যকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবেন নাকি ফ্যাসিস্ত শক্তির সঙ্গে গলা মিলিয়ে একই সুরে কথা বলবেন বাকি সব সমস্যা থেকে চোখ বুজে থেকে? অনেকে বলছেন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে এমনটা হয়; সেখান থেকে ফ্যাসিস্তরা সুবিধা পেলেও কিছু করার নেই। এই যুক্তিটাকে একটু খতিয়ে দেখি। আচ্ছা, কবে থেকে বামপন্থি পরিসরে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধি আর সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের আন্দোলনকে ট্রেড ইউনিয়নের অর্থনীতিবাদী আন্দোলন হিসেবে দেখা হতে শুরু করল? আসলে ঝাপসা চোখের আড়ালে এভাবেই বদলে যাচ্ছে সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণির সংজ্ঞা; আসলে বদলে দেওয়া হচ্ছে। একদিকে শিল্প ক্ষেত্রে চুক্তিকরণ আর ঠিকাকরণের রমরমায় আজ সংগঠিত শ্রমিক আর শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনে সত্যিই খরা। আর তার জায়গাটা নিতে বসেছে সুবিধাভোগী কেরানি শ্রেণি। তাহলে কি কেরানি শ্রেণি আন্দোলনে থাকবে না? হ্যাঁ, থাকবে। তবে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কেরানীশ্রেণী অর্থনীতি বাদী আন্দোলনেও যদি সামিল হতো, তার চেহারা অন্য হতো, তার ভাষ্যও অন্য হতো। সরকারের সঙ্গে তার এতদিনের বিশ্বস্ত অনুচরেরা আজ সংঘাত করছেন তাঁদের নিজেদের স্বার্থে- সেই লড়াই তাঁদের দিক থেকে দেখালে যুক্তি সঙ্গত। সমস্যা হল সরকারের সঙ্গে শাসন ব্যবস্থার স্তম্ভের এই দ্বন্দ্বকে আমরা কীভাবে দেখব তা নিয়ে। ব্যাপক জনগণের সঙ্গে এই লড়াইয়ের সেই অর্থে কোনও সম্পর্ক নেই- একে কোনওভাবেই জনগণের সঙ্গে শাসকশ্রেণির লড়াই হিসেবে দেখা যায় না। আর আজ একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে। একদিকে আমাদের সম্পদ লুঠ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে এর মধ্যে দাঁড়িয়ে দেশের সমগ্র জনগণের উন্নতি কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। আর তার সাথে খাঁড়ার ঘায়ের মতো তীব্র চেহারায় মানুষকে অতিষ্ঠ করছে রাজনৈতিক হিন্দুত্ব যা ব্রাহ্মণ্যবাদের এক চরম ভাষ্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ এমন এক সময় যখন আমাদের দেশে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ সমস্ত গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বিচারে বুলডোজার চালাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ, দলিত, সংখ্যালঘু মানুষ এবং বিরোধী মতের যেকোনো গণতান্ত্রিক মানুষের ওপর। তাই গভীর এই সঙ্কটের বিষয়ে চোখ বুজে থাকলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। সুতরাং আজকের যেকোনো আন্দোলনকে সমগ্রের পরিস্থিতি, ব্যাপক মানুষের কন্ঠস্বর এবং দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখা এবং মেলানোর কাজটাই সচেতন সমাজ বদলের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত।
তথ্যসুত্রঃ
১) Deccan Chronicle, November 21, 2022
২) The Wire, Jan 17 2023
৩) Business Standanrd, May 07 2023
৪) IE June 2 2021 Pratap Bhanu Mehta
৫) Indian Express Jan 29 2021
৬) Business Standard April 19 2021
৭) Indian Express April 1st 2020; Sanjay Srivastava
৮) Times of India March 29 2019
৯) আনন্দবাজার, ২৫/৫/২৩
Photo Courtesy: The Telegraph Online
Comments
Post a Comment