কোন পথে বাংলাদেশ?
অমিতাভ চক্রবর্তী
“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ের কোন প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
- জীবনানন্দ দাশ: অদ্ভুত আঁধার এক
বাংলাদেশের অদ্ভুত ঘনায়মান আঁধার যেন কিছুতেই কাটছে না। গত জুলাই সেপ্টেম্বর নিষ্পলক পত্রিকার সংখ্যায় আত্মগোপনে থাকা এক প্রখ্যাত সাংবাদিকের বয়ান প্রকাশ্যে এসেছিল - 'যুক্তরাষ্ট্র সব সইতে পারে কিন্তু বিদেশ নীতিতে অপমান মনে রাখে হাজার বছর'। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিদেশ নীতিতে মারাত্মকভাবে পরাজিত হয়। পরাজিতদের দুটি নাম পিটার হাস ও ডোনাল্ড লু। শেষ পর্যন্ত মরণ কামড় দেওয়ার জন্য বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্যও করা হয়। এর আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তাদের সমস্ত সহযোগীদের মাঠে নামাবার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিয়েছিল। এই সহযোগীরা কেউ কেউ প্রতিষ্ঠিত, কেউ কেউ ব্যক্তি। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন ট্রাম্প বাইডেনের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়ে ট্রাম্প অভিযোগের সত্যতার প্রতি সিলমোহর লাগান। সংখ্যালঘু নিধন সহ সমস্ত পাপ বিনাশের দায়িত্ব ভারতের (পড়ুন মোদীর) হাতে তুলে দেন। অবশ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার জন্য ফান্ড তিনি বন্ধ করে দেন - এই সমস্তই নতুন বছরের নতুন ঘোষণা।
১১ এপ্রিল গভীর রাতে মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী অভিনেত্রী কন্যাসম মেঘনা আলমকে তার বসুন্ধরা আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে দরজা ভেঙে গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কুদেতার পর সিপিবি এমএল-এর সম্পাদক বদরুল আলম ও তার কন্যা মেঘনার ভূমিকার কথা সবাই জ্ঞাত আছেন। বদরুল একাত্তর সালে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের ভূমিকা ইতিহাস থেকে মুছে দেবার কথা ফেসবুকে লিখেছিলেন - যেমনটা এদেশের হিন্দুত্ববাদীরা মুঘল আমলকে ইতিহাস থেকে বাদ দিতে চান। মেঘনার অভিযোগ সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ করায় তার এই পরিণতি (প্রথম আলো: ১৭ এপ্রিল ২০২৫)। পাল্টা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে 'লাভ ট্র্যাপে' ফেলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে আজ নয় হাসিনার সময় থেকেই। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময়, সরকার আলোচনার পরিবর্তে পুলিশকে দিয়ে রাবার বুলেট, ছররাগুলি, কাঁদানে গ্যাস, গ্রেনেডের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। এর সঙ্গে যুক্ত করে অসংখ্য মিথ্যা মামলা। এর পরিণতিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫৭ জন (বেসরকারি মতে ৮৩৫ জন)। আহত ৬,৭০০, গ্রেফতার ১০৫০ জন। এরকম অবস্থায় বিচার ব্যবস্থাও পুলিশের কাছে সমর্পণ করে। মেঘনাকে কোন আইনজীবী দেওয়া হয়নি।
সভ্য সমাজে একজন নারীর প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিকে বিচারের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় - এখানে ঠিক তার উল্টো হলো। মেঘনাকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে ঢাকার বিশেষ আদালত। যারা মেঘনা এবং তার বাবা বদরুলের পূর্বেকার কাজের ভিত্তিতে বলছেন, ঠিক হয়েছে - তারা ঠিক বলেননি। একজন খ্যাতনামা নারীর যদি এই পরিণতি হয়, তবে গ্রামগঞ্জের শ্রমজীবী নারীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ লিখেছিলাম - 'বাংলাদেশের ইতিহাস চর্চাকে সামনে আনলে, সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে সংখ্যালঘু পীড়ন, দাঙ্গা এবং সর্বোপরি নারী নির্যাতনকে চিহ্নিত করা যায়। পরম্পরা বললেও অত্যুক্তি হবে না। বর্তমান প্রতিবিপ্লবের সময়কালেও এই অভিযোগ আরো জোরালো হয়েছে। অবৈধ সরকারের প্রধান ইউনুস স্মিত হাস্যে সব শুনছেন, প্রতিবিধানের প্রয়োজন বোধ করছেন না। বিগত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস জুড়ে দুর্বৃত্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কমপ্লেক্সগুলির মধ্যে যথেচ্ছ লুঠতরাজ ও ধর্ষণ চালানোর জন্য। এই পর্যায়ে বাংলাদেশের হুজুররা (মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা) যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মসজিদের পক্ষ থেকে রাত পাহারা, মাইকের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করার কাজ প্রতিনিয়ত করে চলেছেন। বোধ করি, এ কারণে হুজুররা বাংলাদেশের সমাজ জীবনে এত উঁচু স্থানে রয়েছেন। ডেইলি স্টার পরিবেশিত সংবাদ থেকে জানা যায় অ্যামনেস্টি ইন্টার্নেশনাল মেঘনার অন্যায় আটকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ রাজ্যের নৈরাজ্যবাদীরাও বাংলাদেশের নৈরাজ্যবাদীদের মতো ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর উদ্বাহু নৃত্য করতে শুরু করেছিলেন। অচিরেই অনেকের মোহভঙ্গ হয়। নৈরাজ্যবাদী ও শোধনবাদীদের মধ্যে মিল একটি জায়গায় - তারা বস্তুর মধ্যে দ্বন্দ্ব খুঁজে পায় না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকট তীব্রতর হয়েছে। মৌলবাদী কার্যক্রমের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বস্ত্রশিল্পের বাজার। নৈরাজ্য পরিস্থিতির জন্য ৪০ শতাংশ কারখানার মালিকরা বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। এদের মধ্যে একটা অংশ আবার আওয়ামী লীগ সমর্থক। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পে পড়েছে। জিডিপির পতন হয়েছে। মুদ্রা মূল্য হ্রাসের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে, রাজনৈতিক ডামাডোলের ফলে রিক্সাওয়ালা, ভাসমান শ্রমিক (ফেরিওয়ালা) ও পরিবহন শ্রমিকদের আয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য মৌলবাদের প্রসারণ ছাড়া ইউনুস প্রশাসনের সামনে বিকল্প পথ খোলা নেই।
মুক্তি যুদ্ধের চেতনার আলোকে ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার সরকার নিশ্চিত করবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি - ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর সব সরকারই ঘোষণাপত্রটিকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ক্ষমতা দখল করেই মৌলবাদীরা জাতীয় ঐতিহ্যগুলি ভেঙে ফেলার তাণ্ডবে মেতে ওঠে। সর্বশেষ ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মুজিবর রহমানের ৩২ নং সড়কের অবস্থিত বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে (প্রথম আলো: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। যে কোনো স্বৈরশাসক যখন জনজীবনের মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে না, ধর্মীয় বা জাতিগত বিভেদের একটি মাত্র পথ খোলা থাকে। ইউনুস সরকারের কাছে একটি মাত্র লাইফ লাইন হল মৌলবাদ - মৌলবাদীরা একমাত্র এই সরকারের ক্যাডার বাহিনী। ঐতিহ্যবাহী ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় মঙ্গল শব্দ থাকার ধুয়ো তুলে লুঠতরাজ ও অগ্নিসংযোগের দ্বারা ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক মৌলবাদের সবটাই কি অমঙ্গল। সমগ্র বিশ্বে মৌলবাদীরা যা করে এখানেও তাই, বাংলার নিজস্ব কৃষ্টি, সেকুলার সাহিত্য, সংস্কৃতিকে উড়িয়ে দেবার জন্য তৎপর হয়েছে – এ কাজে দোসর বর্তমান সরকার।
গত ২৫শে নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইস্কনের সন্ন্যাসী ও বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। নানা অজুহাতে তাকে আদালতে পর্যন্ত পেশ করা হচ্ছিল না। ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেয়। নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকরা মৌলবাদীদের ভয়ে এবং চাকরি যাবার আতঙ্কে পুলিশের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ত্রাসের দেশে পরিণত হয়েছে। নাটোরের শ্মশানকালী মন্দিরের সেবায়েত তরুণ চন্দ্র দাসকে মন্দিরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ জামাত বাহিনীর সদস্যরা মোটর সাইকেলে এসে তরুণ বাবুকে খুন করে চলে যায়। সংবাদে প্রকাশ হয়েছে যে কট্টরপন্থীরা তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষা শিপ্রা রানী মন্ডলকে পদত্যাগ করার জন্য লাগাতার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে (আনন্দবাজার অনলাইন: ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪)। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সরকার দেশ থেকে সমস্ত হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে একটি কট্টর মৌলবাদী নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
অন্য চিন্তাবিদদের মতো বাংলাদেশের নাটক ও চিত্র পরিচালক এম এফ শাহিনের আশঙ্কা বাংলাদেশ ক্রমেই দ্বিতীয় আফগানিস্তান হতে চলেছে। একের পর এক ঘটনাক্রম প্রমাণ করছে, এই আশঙ্কা অমূলক নয়। গত ডিসেম্বর মাসে 'তবলীগ জামাত'-এর ভারতীয় চ্যাপ্টার ও বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সংঘর্ষে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জন ভারতীয় চ্যাপ্টারের সদস্য। ঘটনাক্রম প্রমাণ করছে সন্ত্রাসবাদ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের শাসক বর্গের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা বাংলাদেশের সীমানা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব এন্তোনিও জন গুট্রেসের কাছে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার অবসানের দাবি করা হয়েছে। আক্রমণ করা হয়েছে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মস্থানগুলির উপর। কুষ্ঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী লালনের আখড়ায় আক্রমণ, ভাঙচুর ও ভক্তদের উপর দৈহিক নির্যাতন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত দেশজুড়ে অসংখ্য মাজার, দরগা ও খানকার উপর আক্রমণ করা হয়েছে; যেমন হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ উপাসনা স্থলগুলিতে। প্রায় প্রতিদিন হিন্দু সেবায়েতদের মতো বাউল, ফকির, পীরদের উপর আক্রমণ সংগঠিত করা হচ্ছে। আমাদের প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, এর শেষ কোথায়? এই আত্মঘাতের শেষ কোথায়?
বাংলাদেশের এনজিও মার্কা বিপ্লবীরা বিশ্বের সমস্ত নৈরাজ্যবাদী ও শোধনবাদীদের মত সাম্রাজ্যবাদের বিপদ বুঝতে চাইছে না। সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলির উপর অতি-নির্ভরতা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ। বিদেশী নির্ভরতা, স্বাধীন পুজির বিকাশ না হওয়া, অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগঠনগুলির বিদেশি নির্ভরতা এই সমস্যার কারণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাটি থেকে উৎখাত হওয়া রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছিল। অনেক অপরাধের মধ্যে শেখ হাসিনা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, এই অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ সমগ্র দক্ষিণাংশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তোলা। মার্কিনিদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য হাসিনার সরকার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছিলেন। মাতারবাড়ি বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারত ও চীনের কাছ থেকে নির্মাণ সহায়তা ও ঋণ গ্রহণ করেছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই পরোক্ষভাবে মৃত্যুর কথা বলতেন। কারণ তিনি মার্কিন সরকারের প্রতিশোধ স্পৃহার কথা জানতেন। তিনি বলতেন, মৃত্যুকে তিনি ভয় পান না; কেন বলতেন এখন সবাই বুঝতে পারছে... মৃত্যু হয়নি, কুদেতার মতো আন্তর্জাতিক চক্রান্তে দেশছাড়া হতে হয়েছে।
১৯৩৪ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের শ্যেন দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন:
মাঠ থেকে মাঠে মাঠে - সমস্ত দুপুর ভরে এশিয়ার আকাশে আকাশে
শকুনেরা চরিতেছে; মানুষ দেখেছে হাট ঘাঁটি বস্তি; নিস্তব্ধ প্রান্তর...
আরেক আকাশ যেন - সেইখানে শকুনেরা একবার নামের পরস্পর...
- জীবনানন্দ দাশ: শকুন
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সাহায্য বন্ধের হুমকিতে আরও বেশি কিছু দাবি করছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জর্জ সোরেসের আরাকানের বিদ্রোহীরা সক্রিয় হয়েছে। বিদ্রোহীরা কক্সবাজারকে ব্যবহার করে বর্তমান রাখাইনের বেশ কিছু অঞ্চলে যখন কায়েম রাখতে সমর্থ হয়েছে। মহঃ ইউনুসের সামনে ট্রাম্পের ট্রাম্প কার্ড হলো কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন ও মাতারবাড়ি মার্কিনিদের কাছে তুলে দিতে হবে, তবেই মিলবে ইপ্সিত ডলার। মার্কিন প্রশাসন চীনকে টাইট দেওয়ার জন্য রাখাইন (আরাকান) ও সমগ্র কক্সবাজারকে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্রের খোয়াব দেখতে শুরু করেছে। ইউনুস প্রশাসনের অবস্থা এখন ইসলামী চিন্তাবিদ সিফাতুল মুনাফিকীনের 'দোটানায় দোদুল্যমান' গ্রন্থের মতো কোন কুল রাখি। একদিকে মার্কিন ডলারের দুর্নিবার আকর্ষণ, অপরদিকে মেন্টর ফ্রান্স ও চীনের চাপ। অবশ্য সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ জনশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
আশার কথা, প্রথমদিকে হাসিনা শাসনে ক্ষুব্ধ মানুষজন অন্ধ আবেগে ভর করে ছাত্রদের সমর্থন করেছিল, তাদের মোহভঙ্গ হতে শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রশক্তি পুলিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ঝটিকা প্রতিবাদ মিছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হচ্ছে। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, জনগণ নিজেরাই পথ খুঁজে নেবে। পথই পথ দেখাবে। বাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে, এক শেখে দেখে, আর এক শেখে ঠেকে। এখন অনেকেই ঠেকে শিখতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের কোথায় ' জামাত এবং মহঃ ইউনুসের হিসাব হয়তো গোড়ায় একই ছিল। খিলাফৎ এবং মৌলবাদী সংগঠনগুলিরও আশা ছিল ক্ষমতা দখলের। কিন্তু এখন তো স্পষ্ট, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কেননা ইউনুস ক্ষমতা ছাড়তে চান না। ৮ মাস হয়ে গেল এখনো তিনি নির্বাচনের পথনির্দেশিকা দিচ্ছেন না, ফলে এখন জামাত আর বিএনপি অভিন্ন স্বার্থে একজোট হতে চাইছে। তারা পুরনো মিত্রও বটে! আওয়ামী লীগ এদের মূল নিশানা। তারা চায় আওয়ামী লীগকে ভোট থেকে সরিয়ে দিতে (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭শে এপ্রিল ২০২৫)। নাছিম আরো বলেন, 'দেশবাসী বুঝতে পারছেন, বিপ্লবের নামে বিদেশী শক্তির ইন্ধনে ডলার এনে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে এই উপদেষ্টা সরকার। তরুণ সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে চাইছে'। বাংলাদেশ আরও একবার ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্যবদ্ধ দুর্বার আন্দোলন দেখতে চায়!
অমিতাভ চক্রবর্তী গণআন্দোলনের সংগঠক এবং সমাজকর্মী।
লেখকের মতামত একান্ত নিজস্ব। সামাজিক কর্ষণের জন্য প্রকাশিত।
Picture Courtesy: ChatGPT Ghibli
বাংলাদেশের আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের প্রকাশিত অন্যান্য মতামতের লিঙ্কঃ
১। https://thediligent2018.blogspot.com/2024/08/blog-post_17.html
২। https://thediligent2018.blogspot.com/2024/12/blog-post_14.html
Comments
Post a Comment